May 2, 2024, 10:45 am

স্কুলগুলোতে চলছে সেশনচার্জ বাণিজ্য

যশোরের স্কুলগুলোতে জোরেসোরে শুরু হয়েছে সেশনচার্জ বাণিজ্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জিম্মি করে ইচ্ছামত অনৈতিক পন্থায় সেশনচার্জ আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যশোরের বিশেষ একটি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে এ সেশনচার্জ সর্বোচ্চ ২৪ হাজার ১৩০ টাকা ও সর্বনিম্ন বকচর রোটারি স্কুলে ৬০ টাকা নেয়া হচ্ছে।

অবশ্য এ কাজে প্রশাসন পরিচালিত স্কুল ও সরকারি স্কুলগুলোও পিছিয়ে নেই। তারাও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করছে এ চার্জ। বছরের শুরুতে ব্যাপক পরিমাণ এ টাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দিতে গিয়ে কাহিল হয়ে পড়ছেন অভিভাবকরা। তাদের প্রশ্ন একই বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে নতুন ক্লাসে উঠে আবার কেন কথিত সেশনচার্জের নামে ভর্তি ফি দিতে হবে?

যশোরের অসংখ্য অভিভাবক অভিযোগে জানান, বছরের শুরুতেই ছেলে মেয়েদের শিক্ষার পেছনে তাদের কাড়ি কাড়ি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। যার কোন কোনটির বৈধতা নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এক প্রকার অভিভাবকদের জিম্মি করে এসব টাকা আদায় করছেন। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে সেশনচার্জ বাণিজ্য। তাদের অভিযোগ, যে স্কুলে তার ছেলে-মেয়ে পড়াশুনা করে ও বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে, তাকে কেন আবার ভর্তি ফি বা সেশনচার্জ দিতে হবে। যদি অন্য কোন স্কুল থেকে শিক্ষার্থী নতুন স্কুলে ভর্তি হয়, তবে তাদের ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য হতে পারে। কিন্তু যশোরের প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চোখ বন্ধ করে এ কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক থেকে শুরু করে, কিন্ডার গার্ডেন, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা পর্যায়েও এ প্রথা চালু রয়েছে। ফলে কোন স্তর থেকেই রেহাই পাচ্ছেন না অভিভাবকরা। অবশ্য এ তালিকার বাইরে নেই প্রশাসন পরিচালিত একটি স্কুলসহ সরকারি বিদ্যালয়গুলো।

সূত্র জানায়, যশোরের বিশেষ একটি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণিতে জানুয়ারি মাসের বেতন ও সেশনচার্জসহ সর্বোচ্চ ভর্তি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪ হাজার ১৩০ টাকা। এটাই যশোরাঞ্চলের কোন স্কুলের সর্বোচ্চ ভর্তি ফি বলে শহরের অসংখ্য অভিভাবক মন্তব্য করেছেন। এছাড়া প্রশাসন পরিচালিত একটি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে পুরনো শিক্ষার্থীর সেশনচার্জ ৭ হাজার ৫শ’ টাকা, সপ্তম শ্রেণিতে একমাসের বেতনসহ সেশনচার্জ ৯ হাজার ৯শ’ টাকা ও তৃতীয় শ্রেণিতে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি ফি নেয়া হয়েছে ৮ হাজার ৫শ’ টাকা। সরকারি মাধ্যমিক পর্যায়ের একটি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে এক মাসের বেতন ও টিফিনসহ সেশনচার্জ ধরা হয়েছে ১২শ’ ৩৭ টাকা। শহরের খড়কী এলাকার শিশুদের একটি স্কুলে প্লে গ্রুপে ভর্তি ফি ২১ হাজার টাকা, প্রথম শ্রেণিতে পুরনো শিক্ষার্থী সেশনচার্জসহ ভর্তি ফি ১৬ হাজার টাকা ও বই বাবদ ৩ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে বলে অভিভাবকরা জানিয়েছেন। একই অবস্থা চলছে নন এমপিওভূক্ত মাদ্রাসায়। এছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দারোয়ান, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ অন্যান্য কারণ দেখিয়ে ৫০ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ তালিকায় সর্বনিম্নে রয়েছে বকচর রোটারি বসিরুননেসা চৌধুরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৬০ টাকা।

এসব ব্যাপারে শহরের ঘোপ এলাকার অভিভাবক রিপন চৌধুরী বলেন, ষষ্ট শ্রেণিতে মেয়ের পড়াশুনার খরচ জোগাতে গিয়ে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। সরকারি স্কুলে ওই শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ না থাকায় বেসরকারি স্কুলে গিয়ে ভর্তির ফি শুনে তিনি হতবাক হয়েছেন। ফলে খুঁজে খুঁজে তিনি লোন অফিসপাড়ার একটি বেসরকারি স্কুলে ২১শ’ টাকা ভর্তি ফি দিয়ে মেয়েকে ভর্তি করিয়েছেন। তিনি বলেন, গরীব মানুষের জন্য এখন আর পড়াশুনা নেই। লেখাপড়া এখন ব্যয় বহুল ও ধনীদের জন্য প্রযোজ্য হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার একেএম গোলাম আযম বলেন, সরকারি কোন স্কুল বা এমপিওভুক্ত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। যদি কোন বিদ্যালয় সেশনচার্জ বা ভর্তি ফির নামে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বেশি টাকা আদায় করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :